তাবলীগ জামায়াতের চলমান সংকট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা.... মুফতি দিলাওয়ার হোসাইন (দাঃ বাঃ)

তাবলিগ জামাতের সদস্যদের তাদের নিজস্ব ফিকহ অনুসরণে কোন বাধা দেওয়া হয় না, যতক্ষণ না তা সুন্নি ইসলাম হতে বিচ্যুত হয়। তাবলীগ জামাত দাওয়াতের উদ্ধৃতির মাধ্যমে এর উদ্দেশ্যকে সংজ্ঞায়িত করে, যা হল ইসলামের প্রচার বা ধর্মান্তরিতকরণের আহ্বান। তাবলীগ জামাত দাওয়াতকে শুধুমাত্র সৎকাজের আদেশ আর অসৎকাজের নিষেধ হিসেবে ব্যাখ্যা করে। তাদের মতে, মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, ইসলাম আল্লাহর মনোনীত একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা এবং সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছে দেয়ার জন্য আল্লাহ পৃথিবীতে অসংখ্য নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছিলেন; কিন্তু যেহেতু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর শেষ বাণীবাহক, তার পরে আর কোনো নবী বা রাসূল আসবেন না, তাই নবী মুহাম্মদ বিদায় হজের ভাষণে মুসলমানদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার দায়িত্বটি দিয়ে গিয়েছেন। তাবলিগ জামাত দাওয়াতের এই উদ্দেশ্যকে দুটি নির্দিষ্ট আয়াতের আওতায় সংজ্ঞায়িত করে, যাতে উক্ত লক্ষ্যের উল্লেখ রয়েছে।
এই দুইটি আয়াত হল:
“তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের(কল্যাণের) জন্য তোমাদেরকে বের করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে।" (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১১০)
“তার চেয়ে ভাল কথা আর কি হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নিজে নেক আমল করে আর বলে যে, আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্য হতে একজন। (সূরা হা মীম সিজদা আয়াত-৩৩)
তাদের মতে, ইসলামের প্রাথমিক যুগে ইসলামী নবী মুহাম্মদের মৃত্যুর পর সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ীগণের মাধ্যমে ইসলামী জীবন বিধান প্রচার ও প্রসারের কার্যক্রম আরো বিস্তৃতি লাভ করে,কিন্তু মুসলিম শাসকদের ক্ষমতা বিলুপ্তির পর ইসলামী প্রচার কার্যক্রমে ভাটা পড়তে থাকে, যা থেকে পরিত্রাণের জন্য মুসলিম মনীষীদের প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল; আর অনুরূপ চিন্তাধারা থেকে মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভি ভারতের দিল্লিতে তাবলিগ জামাতের সূচনা করেন, যার প্রচেষ্টার ফলে তাবলিগ জামাত একটি বহুল প্রচারিত আন্দোলনে রূপ নেয়। তাবলিগ জামাত সারা বিশ্বে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়াকে তাদের প্রধানতম উদ্দেশ্য হিসেবে ব্যাখ্যা করে থাকে।
তাবলিগ জামাত সকলকে দাওয়াতের ইসলামী চাহিদা পুরণ করতে উৎসাহিত করে, যদিও কোন ব্যক্তি শক্তিশালী ধর্মীয় বুদ্ধিবৃত্তির অভাবসম্পন্ন হয় তবুও। এই বৈশিষ্টটি ছিল অন্যান্য ইসলামী আন্দোলন থেকে আলাদা, যেগুলো প্রধানত ওলামা পরিচালিত এবং যাতে নেতৃত্বের ভূমিকা ধর্মীয় পণ্ডিতদের মধ্যে বিস্তৃত ছিল। এছাড়াও ধর্মপ্রচারের জন্য ইসলামী পাণ্ডিত্যের সর্বোচ্চ মানদণ্ড অর্জন করা পূর্বশর্ত হওয়ার যে নেতৃস্থানীয় মতবাদ আছে, তাবলীগ জামাত তা অস্বীকার করে এবং তারা দাওয়াত দেওয়াকে আত্মসংশোধনের একটি ক্রিয়াকৌশল হিসেবে হিসেবে প্রচার করে।
সালাফিদের মতই, তাবলীগ "তাদের চারপাশের 'অধার্মিক' সমাজ থেকে তাদের দৈনন্দিন জীবনে বিচ্ছেদ" কামনা করে। তাবলিগ জামাতের একমাত্র উদ্দেশ্য হিসেবে বেশিরভাগ খুতবায় সুষ্পষ্টরূপে বলা হয়ে থাকে যে, মুসলমানগণ ইসলামী নবী মুহাম্মদ দ্বারা অনুকরণীয় ইসলামী জীবনযাত্রাকে পরিপূর্ণরূপে গ্রহণ করে থাকে এবং তার আমন্ত্রণ জানায়। এর সাথে বিশদভাবে বর্ণিত একগুচ্ছ ধর্মীয় সঠিক আচরণও জড়িত থাকে: "(নবীর) অনুসারীদের অবশ্যই উচিৎ নবীর মতো পোশাক পরা, তিনি যেভাবে মেঝেতে ঘুমাতেন সেভাবে ঘুমানো, ডানদিকে পাশ ফিরে"; বাম পায়ে টয়লেটে প্রবেশ করা, কিন্তু ডান পায়ে পায়জামা পরিধান শুরু করা; খাবারের সময় কাটাচামচ ব্যবহার না করা, এর পরিবর্তে হাত ব্যবহার করা; এবং আরও অন্যান্য।
মুহাম্মদ ইলিয়াস যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন তা হল কমপক্ষে দশ জন ব্যক্তির একটি দল (যার নাম জামাত, আরবি: جماعاتِ অর্থ সমাবেশ) সংগঠিত করা এবং তাদেরকে ধর্মপ্রচারের জন্য বিভিন্ন গ্রামে বা আশেপাশে প্রেরণ করা। এই 'বহির্গমন', বা দাওয়াতের সফরগুলো বর্তমানে তাবলিগ জামাতের নেতাদের দ্বারা সংগঠিত হয়। এই সফরগুলোতে, "কর্মের ফজিলত সম্পর্কিত" (মুহাম্মাদকে অনুকরণ বিষয়ক) মুহাম্মদের একটি হাদীসে"র উপর জোর দেওয়া হয়। উক্ত ফাযায়েল (গুণাবলী) এর হাদীসে এগুলিকে ঈমান (ধর্মবিশ্বাস) এবং ইহতিসাব (আল্লাহর খাতিরে) বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং তাবলিগ জামাত বিশ্বাস করে যে, এটি আখিরাতের (পরকালের) পুরষ্কারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আহরিত শক্তি। তাবলীগ জামাত প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস প্রচার করতেন যে, সদ্গুণের জ্ঞান ও আমালু-সালিহা (সৎকাজ) হল মাসআলা-মাসায়েল (আইনশাস্ত্র) এর জ্ঞানের চেয়ে অধিক অগ্রগণ্য। ফিকহের বিস্তারিত জানা (নামাজের ফরজ ও সুন্নত) তখনই উপকারী হবে যখন একজন লোক নামাজ আদায়ের মত রীতিনীতি পালনে সক্ষম হবে। তারা জোর দেয় যে শিক্ষার সর্বোত্তম উপায় হল অন্যদেরকে শিক্ষা দেওয়া ও উৎসাহিত করা, কুরআন ও হাদিসের নবী, সাহাবা এবং আল্লাহর ওলী-আওলিয়া ("আল্লাহর বন্ধু")দের গল্পের আলোকে লিখিত তাবলিগ জামাত আন্দোলনের দ্বারা প্রস্তাবিত বইগুলোর সাহায্যে। যদিও এই আন্দোলনের সাথে সম্পর্কিত কিছু বই রয়েছে, বিশেষত জাকারিয়া কান্ধলভি দ্বারা লিখিত, এতে বইয়ের পড়াশোনার উপর জোর দেওয়া হয়নি, বরং সরাসরি ব্যক্তিগত যোগাযোগের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।[৪৭][৪৮] সাধারণত "তাবলীগী নিসাব" (তাবলিগী পাঠ্যক্রম) নামে পরিচিত কিছু বইয়ের একটি সংগ্রহকে সাধারণ পাঠের জন্য তাবলীগ জামাতের প্রবীণরা সুপারিশ করেন। এই বইগুলো হল ( হায়াতুস সাহাবা , ফাযায়েলে আমল, রিয়াদুস সালিহীন, ফাযায়েলে সাদাকাত , ও মুন্তাখাব হাদীস)।
আন্দোলনটি মুসলিমদেরকে তাদের দৈনিক রুটিনের বাইরে কিছু সময় তাবলিগী কাজকর্মে ব্যায় করতে উৎসাহিত করে যেন বাকি রুটিনও তাবলীগী জীবনশৈলীর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয়। এছাড়াও অনুসারীদেরকে তাদের বিশ্বাসকে আরও গভীর করতে (বিশ্বব্যাপী প্রাপ্ত) দেওবন্দি মাদারিস বা মাদ্রাসাসমূহে ভর্তি হতে উৎসাহিত করা হয়।

Пікірлер: 10

  • @mddidarulalam1439
    @mddidarulalam14392 ай бұрын

    মাসাল্লাহ

  • @user-vb6gl3gp5l
    @user-vb6gl3gp5l4 ай бұрын

    আলেম কারা যারা তাহকিক না করে অন্য লোকের দোষ আলোচনা করে তারা?

  • @morning-light24

    @morning-light24

    4 ай бұрын

    অবশ্যই না। সাক্ষ্য প্রমাণাদি ব্যতীত যেকোন ধরণের অভিযোগ গ্রহণযোগ্যতা পায় না। কেবল অবুঝ, পাগল, মস্তিষ্ক বিকৃত মানুষই না জেনে, না বুঝে কথা বলে। তবে জেনেও যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে না জানার ভান করে সে সকল ছদ্মবেশী আলেম পরিচয়ধারী ইসলাম ও মুসলিম মিল্লাতের শত্রুর সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। . ওরা ইসলাম ও মুসলিম মিল্লাতের কেহ নয়, বরং শত্রু। তাদের গোপন ও গভীর ষড়যন্ত্রের কারণে আজ বিশ্বে বহু সংখ্যক মুসলিম থাকা সত্বেও অল্প সংখ্যক ইয়াহুদি ও ইসলাম বিদ্বেষীদের হাতে আমরা নির্যাতিত। . মহান আল্লাহ তা’য়ালা গোপন এবং প্রকাশ্য শত্রুর ক্ষতি হতে আমাদেরকে হেফাজত করুন, আমীন।

  • @user-vb6gl3gp5l

    @user-vb6gl3gp5l

    4 ай бұрын

    @@morning-light24 বাংলাদেশের অধিকাংশ আলেম মিথ্যা কথা বলে আর মিথ্যার পক্ষে ফতোয়া দেয়। বলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মিথ্যা বলা জায়েজ! অথচ হাদিসে আছে মিথ্যা সকল পাপের মূল।তারা মাদ্রাসায় ছাত্রদের মিথ্যা বলা যাবে একথাও শিক্ষা দেয়।আর এইসকল আলেমদের প্রতিহিংসার শিকার হয় হক্কানি আলেমরা। দুনিয়াবি আলেমদের কথার মধ্যেই বুঝা যায় তারা যে দুনিয়াবি।আর আখেরাতমূখী আলেম খুবই অল্প। তাঁরা আজ নির্যাতিত।আর তারা নাকি আলেমই না।

  • @tahminaaktar-gz5yn

    @tahminaaktar-gz5yn

    24 күн бұрын

    Ahare hotobaga

  • @user-vb6gl3gp5l

    @user-vb6gl3gp5l

    22 күн бұрын

    @@tahminaaktar-gz5yn কি গো ভাগ্যবতী?

  • @Shajid-se7do
    @Shajid-se7do5 ай бұрын

    এই হুজুর এর যত ওয়াজ সুনি সাউন্ড সিস্টেম ভালো হয়না কারন কি জানতে চাই

  • @morning-light24

    @morning-light24

    5 ай бұрын

    সে কারণ আমারও সম্পূর্ণরূপে নেই জানা। তবে উনি একজন উচ্চ পর্যায়ের আলেম।

  • @eftakherhossain1311

    @eftakherhossain1311

    5 ай бұрын

    Apni onno channel a sunen..Uni obossoi ei upomohadesh er ekjon boro alem...Amra lucky j unar waz youtube a shunte parci.

  • @eftakherhossain1311

    @eftakherhossain1311

    5 ай бұрын

    Ahlay Hoque kawmi network a dekte paren

Келесі