কে এই তৈয়্যব শাহ? ৭১’এ কী ছিল তার ভূমিকা?
সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ১৯১৬ সালে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ হাজারা জেলার সিরিকোট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোট ও মাতা সৈয়দা খাতুন। তিনি পিতৃকুল-মাতৃকুল উভয় দিক দিয়ে ছিলেন সৈয়দ বংশীয়। তাঁর পূর্বপুরুষ ইসলাম প্রচারে নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে বাগদাদ আসেন, সেখান থেকে আফগানিস্তান পরে আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে যান।
আধ্যাত্নিক সুফি সাধক তৈয়্যাব শাহ ছিলেন প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (দ.) এর ৩৯তম বংশধর। তার পিতা সৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোটি একজন বিখ্যাত সুফি সাধক ছিলেন। তাঁকে ফাতিহে সিরিকোট বা সিরিকোট বিজেতা বলা হয়।
তৈয্যব শাহ পিতার তত্ত্বাবধানে ১১ বছর বয়সে কোরআন হিফজ করেন ।তিনি হরিপুরের দারুল উলুম ইসলামিয়া রহমানিয়াতে পড়াশুনা করেন। তাফসীর ও হাদিসের বিশেষ শিক্ষা নেন সরদার আহমেদ লাইলপুরী, আব্দুর রহমান ও আব্দুল হামিদ থেকে। এই মহান আধ্যাত্নিক সুফি সাধক পিতা সৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোটি থেকে তাফসীর, ফিক্বহ, নাহু, উসুল, সারুফ, মানতিক, আক্বাইদ, মা'রিফাত, হিকমাত ও ত্বরিকতের শিক্ষা নেন। ১৯৪৩ সালে ২৮ বছর বয়সে তিনি কৃতিত্বের সাথে শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করেন।
তৈয্যব শাহ শুধু একজন পীরে কামেল, আধ্যাত্নিক সুফি সাধক পুরুষ ছিলেন না, ছিলেন একজন সুবক্তা। গ্রামে গঞ্জে শহরে বন্দরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সফরকালে ইসলামী মাহফিল, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, সম্মেলন, সমাবেশে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ তাক্বরীর ও যুক্তি ও তথ্যভিত্তিক ভাষণ গুলো ছিল অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী। তিনি সুন্নিয়ত এবং ত্বরিকা-এ-আলিয়া কাদেরিয়ার বিস্তার করেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। তাঁর অসংখ্য ভক্ত অনুরক্ত আজ পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে আছে।
১৯৪২ সালে ২৬ বছর বয়সে তরিকত প্রচারে তৈয়্যব শাহ প্রথম বাংলাদেশের চট্টগ্রামে আসেন। এবং আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিদে রমজান মাসের খতমে তারাবীতে ইমামতি করেন। ১৯৫৮ সালে তৈয়্যাব শাহ’র পিতা আল্লামা সৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোট রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র বাংলাদেশে শেষ সফর করেন। চট্টগ্রামের রিয়াজুদ্দিন বাজারে অনুষ্ঠিত খতমে গাউসিয়া মাহফিলে তাঁকে জনসম্মুখে খেলাফত দেয়া হয়। ভূষিত করা হয় ‘খলিফায়ে আজম’ এ । তখন তার বয়স ছিল ৪২ বছর।
আল্লামা সৈয়দ তৈয়্যব শাহ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’ তাঁর বাবা সৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি মায়ানমার, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ এ অনেক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৪ সৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি কর্তৃক চট্টগ্রাম ষোলশহরে প্রতিষ্ঠিত ‘জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদরাসা’ প্রতিষ্ঠা করেন। যা আজ ‘সুন্নিয়া মাদ্রাসা’ বা ‘জামেয়া’ নামে একক পরিচয়ে সমুজ্জ্বল। ১৯৬৮সালে রাজধানী ঢাকার মুহাম্মদপুরে প্রতিষ্ঠা করেন ‘কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া আলীয়া মাদ্রাসা’। এছাড়া মাদ্রাসা-এ- তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া (হালিশহর, চট্টগ্রাম), মাদ্রাসা-এ- তৈয়্যবিয়া তাহেরিয়া সুন্নিয়া ও মসজিদ কমপ্লেক্স (কালুরঘাট, চট্টগ্রাম), মাদ্রাসা-এ-তৈয়্যবিয়া অদুদিয়া সুন্নিয়া (চন্দ্রঘোনা, চট্টগ্রাম) ইত্যাদি, পাকিস্তানের করাচির আওরঙ্গী টাউনে মাদ্রাসা-এ- তৈয়্যবিয়া ও মায়ানমারে মাদ্রাসা-এ- আহলে সুন্নাত প্রতিষ্ঠা করেন।
তৈয়্যাব শাহ ছিলেন পাকিস্তান আন্দোলনের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। স্বাধীন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাকালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন দেন এবং বাঙ্গালি জাতির ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নিপীড়ন, ধর্ষণ ও গণ হত্যার বিরোধিতা করেন। তৈয্যব শাহ ছিলেন নবী ও রসুল হযরত মুহাম্মদ (দ.)'র শুভাগমনের দিন ১২ রবিউল আওযাল উপলক্ষে বাংলাদেশে আয়োজিত বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা "জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী"র পথিকৃৎ ।
আল্লামা সৈয়্যদ তৈয়্যব শাহ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র প্রদত্ত রূপরেখা ও আলহাজ্ব নূর মুহাম্মদ আলকাদেরী তাঁর নির্দেশে ১৯৭৪ এ ‘আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া (ট্রাস্ট)’র ব্যবস্থাপনায় ১২ রবিউল আউয়াল সর্বপ্রথম বর্ণাঢ্য মিছিল বের করা হয়। হাজার হাজার মুসলিম জনতার বর্ণাট্য এ মিছিলটি বলুয়ারদিঘী পাড়স্থ খানকাহ্ এ কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া হতে শুরু করে ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া মাদরাসা ময়দানে আসে। মীলাদ মাহফিল, মুনাজাত ও তবাররুক বিতরণের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। যার ধারাবাহিকতা পরবর্তীতেও অব্যাহত থাকে। দিনদিন এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া মাদরাসা ময়দান থেকে শুরু হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া মাদরাসায় মিলাদ মাহফিলে মিলিত হয়।
তৈয়্যব শাহ ১৯৮৬ সালে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠা করেন মজলিশে গাউসিয়া সিরিকোটিয়া পাকিস্তান।
১৯৭৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর তিনি বাংলা ভাষায় সুন্নিয়াত ভিত্তিক সাহিত্য প্রকাশনার উপর গুরুত্বারোপ করে মাসিক ‘তরজুমান এ আহলে সুন্নাত’ প্রকাশের নির্দেশ দেন এবং মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে ১৯৭৭ সালের জানুয়ারি থেকে আনজুমান কর্তৃক এ প্রকাশনার যাত্রা শুরু হয়। যা এখনো প্রকাশিত হচ্ছে। এটি সুন্নিয়তের শীর্ষস্থানীয় মাসিক প্রকাশনার ক্ষেত্রে এখনো প্রধান এবং প্রাচীনতম।
মহান সাধক আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ৭৭ বছর বয়সে ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের ৭ই জুন সোমবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে শেতালু শরীফে মৃত্যুবরণ করেন।
সৈয়্যদ তৈয়্যব শাহ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র প্রদত্ত রূপরেখা অনুসারে- আলহাজ্ব নূর মুহাম্মদ আলকাদেরী তাঁর নির্দেশে ১৯৭৪ এ ‘আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া (ট্রাস্ট)’র ব্যবস্থাপনায় ১২ ই রবিউল আউয়াল বলুয়ারদিঘী পাড়স্থ খানকাহ্ এ কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া সর্বপ্রথম "জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবীর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শুরু হয়েছিল তা এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবীর শোভাযাত্রায় পরিণত হয়েছে।
Пікірлер: 10
চমৎকার উপস্থাপনা।
অসাধারণ উপস্থাপন ❤❤
Subhan Allah Alhamdulillah Allah hu akbar amin Amin amin
সুন্দর উপস্থাপনা❤
মাশাআল্লাহ
❤❤❤❤
সুন্দর উপস্থাপন হয়েছে। মাশাল্লাহ
অনবদ্য!
জশনে জুলুসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এখন সময়ের দাবি
ইসলাম প্রচারে তৈয়্যব শাহর অবদান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলাম।